১
রুনি অত্যন্ত ডানপিটে স্বভাবের মেয়ে। এলাকা চষে বেড়ানো ছিল তার অন্যতম স্বভাব। সুখেনগঞ্জ শহর এর এমন কোন গলি নেই যে সে চিনতো না। রুনির বাবা মারা যায় অনেক ছোটবেলায়।সংসারের দায়িত্ব নিতে গিয়ে রুনির মা সবকিছু ঠিক মিলিয়ে নিতে পারেন নি। রুনি কে একেবারে ছেড়ে দিয়ে মানুষ করেছেন। বিশ বছর বয়স হতে হতে চারটা প্রেম করেছে সে। চতুর্থ বার যে প্রেম টা করেছিল সে ছিল একটা নেশাখোর। রুনির কেন এরকম একটা ছেলেকে পছন্দ হয়েছিল এটা সবার অজানা। তবে এই ঘটনার পর তার মা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, রুনির বিয়ে দিয়ে দেবেন। কিন্তু সেটা নিয়ে অনেক সমস্যা দেখা দেয়। কেওই রুনিকে পছন্দ করত না। তাকে নিয়ে এলাকায় অনেক বদনাম ছিল।
একদিন সন্ধ্যাবেলায় করিম আর আজমল, করিমের বাসার সামনে মাচায় বসে ব্যবসা নিয়ে আলোচনা করছিল। এরকম সময় রুনি পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। আজমল এর সাথে রুনির শেষবার দেখা হয়েছিল পাঁচ বছর আগে। হঠাৎ করে আজকে দেখা অনেকবছর পর। আজমল একদৃষ্টে রুনির দিকে তাকিয়ে আছে। রুনি হাঁটতে হাঁটতে যখন গলির মুখে হারিয়ে গেল। আজমল হঠাৎ করে বলে উঠল, ‘আচ্ছা ওইটা রুনি না? ও এত সন্ধ্যায় বাইরে কি করে?' করিম তখনও ব্যবসা নিয়ে কথা বলছিল। হঠাৎ করে এরকম কথা শুনে চমকে উঠে তাকালো আশেপাশে। রুনিকে খেয়াল করে নি করিম। তারপরেও বলল, ‘ওকে এরকম মাঝেমাঝেই রাতবিরাতে ঘুরতে দেখা যায়। মেয়েটার ব্যাপারে অনেক বদনাম আছে। ’ আজমল জিজ্ঞেস করল কিরকম বদনাম আছে, করিম এবারে মজা করে বলল, ‘এত খোঁজখবর কেন? বিয়ে করবি নাকি?’ এটা শুনে আজমল চুপ করে গেল। করিমও আর কোন কথা বাড়ালো না। কিছুক্ষন মাচার উপরে বসে থেকে যে যার বাড়িতে চলে গেল।
২
করিমের কথাটা আজমল এর মাথায় গেঁথে আছে। বয়েস হয়েছে তার। ব্যবসা শুরুর পর থেকে তার সাথে বাড়ির লোকজনের কথা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। একা একা থাকতে তার আর ভাল লাগে না। ব্যবসা শুরুর দুই মাসও হয় নি। বাড়ির লোকজন তখনও জানতো না করিমের ব্যবসার আকার-প্রকার কি। হাসপাতাল থেকে ফেরার পর তাকে সহজে কেও ঘাটায় না। বাড়ির লোকজন জানতো সে নেশা করা ছেড়ে দিয়েছে, কিন্তু সবাই বুঝতে পেরেছিল সে একটা কুকীর্তি করবে।
পরদিন বিকেলে আজমল বাইরে যাবার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। এরকম সময়ে তার বড় ভাই এসে তাকে বলল, ‘ভাই তুই আমার সাথে এসে আমার ব্যবসাটা দেখ। আমার অনেক ভাল হত। ব্যবসাটা বাড়ির ভেতর থাকলো। আমার আলাদা করে কাউকে নিতে হল না।' আজমল এর আগেও তার ভাইকে না করে দিয়েছে এই ব্যাপারে। কিন্তু মাঝেমধ্যেই তাকে এই প্রস্তাব টা দেয়া হয়। আজমল বের হয়ে যাওয়ার সময় তার ভাই তাকে বলল, ‘দেখ তুই যেটা করছিস সেটার খবর আর কেও না জানুক আমি জানি। এগুলা না করে ভাল কিছু কর। আমরা তোকে একটা বিয়ে দেই ভাল দেখে।' আজমল এইবার পিছনে তাকালো। তারপর আবার পায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘কি মনে হয় এটা দেখে? আমাকে কোন ভাল মেয়ে বিয়ে করবে?' আজমলের ভাই অবাকদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।
৩
রুনি আর আজমল একসঙ্গে এক বিছানায় বসে আছে। পাঠক রা আকাশ থেকে পড়বেন না। তাদের বিয়ে হয়ে গেছে। এরকম ক্ষেত্রে অনেকেই আশা করেন বিয়ে কিভাবে হল, কি কি সমস্যা পার করে তারা বিয়ে করল এসমস্ত বিশ্লেষণ থাকবে। এরকম কিছুই হয় নি । সহজ ঘটনা হল রুনির মা একটা ছেলেকে খুজতেছিলেন তার মেয়ের সাথে বিয়ে দেয়ার জন্য। কাউকে না পেয়ে আজমলের প্রস্তাবে সোজা রাজী হয়ে যান। রুনিও একরকম নিরুপায় হয়েই বিয়ে করে ফেলে। তাকে রীতিমতো বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছিল। বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার দুইদিনের মধ্যে তাদের বিয়ে হয়ে গেল।
রুনি একবার একটা কথা বলারও সুযোগ পেল না। বাসর রাতে সে এবার জিগেস করল, ‘আমাকে বিয়ে করলেন কেন?’ আজমল কি জবাব দেবে ভেবে পেল না। কিছুক্ষণ পর রুনির দিকে তাকালো। দেখলো রুনি হাসছে। আজমল একটু অবাক হল। হাসছে কেন জিগেস করলে বলল, ‘আমাকে বিয়ে করে আপনি ফেসে গেলেন, বুঝলেন? আমি আপনার জীবন তেজপাতা করে দেব।' এই বলে রুনি আবারও হাসা শুরু করল।
অন্য কেও হলে হয়ত চমকে যেত। আজমল একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলো। একভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে রুনি চুপ হয়ে গেল। রুনি জিগেস করল, ‘ কি দেখছেন?’ আজমল কোন কিছু না বলে রুনির উপর ঝাপিয়ে পড়ল।
পানি খেতে এসে আজমল এর মনে হল তার বারান্দার সামনে দিয়ে কিছু একটা সরে গেল। কুকুর ছিল হয়ত বা। আজমল তাদের বারান্দার পাশের জঙ্গলটার দিকে একবার তাকালো। তার মনে হল সেখানে কেও একজন দাড়িয়ে আছে। সে একবার ফিক করে হেসে ঘরে ফিরে আসলো।